খালি এইটার প্রচারণার জন্য সেমিনার না, এইটা দিয়া ব্যবসা ও করন যায়। এমএলএম সিস্টেম ব্যবসা। এইটা শুইনা বাইর হইয়া যাইবার মতলব করতাছি, এই ধরনের দালালী ব্যবসা আমি মোটেও পছন্দ করিনা, এটা বলদাটায় জানে, তাই আমারে কিছু কয়নাই। বার হতে পারলামনা, কারণ ততক্ষনে সেমিনার হলে ঢুকে গেছি। যাক বসলাম। একটু পর লেকচার শুরু হল। কোত্থেকে যে লেকচারওয়ালারে ধইরা আনছে ! উচ্চারণে তার বিশাল সমস্যা। Program রে কয় পোরগাম !! যাই হোক খিচ খায়া বইসা রইলাম। প্রথমেই কত শত কারণে আমাদের সাস্থ্য নষ্ট হয় তার উপর ইতিহাস কইলো। শুনিনাই সবকিছু। তারপর তাগো ব্রেসলেট এর গুণকীর্তণ ! এই ব্রেসলেট নাকি চার টি ক্ষমতা সম্পন্ন। ১. ম্যাগনেটিক ফিল্ড ২. নেগেটিভ আয়ন উৎপাদনকারী ৩. ইনফ্রারেড উৎপাদনকারী ৪. রেডিয়েশন ধ্বংসকারী খাইছে কয় কি ! নড়েচড়ে বসলাম। সামনের জনরে ধমক দিলাম সোজা হয়ে বসার জণ্য। বিশাল জিনিস। আমার আবার বিজ্ঞানের কথাবার্তা ভালোই লাগে। ভাল করে শুনতে লাগলাম এই বৈজ্ঞানিক ব্রেষলেট সম্পর্কে। শুনতে শুনতে খটকা লাগতে লাগলো। এবং বুঝলাম পূরাটাই বোগাস ফাউল। দেখেন কি কয়... প্রথমটা না হয় মানলাম। চুম্বক থাকলেই ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরী হয়। কিন্তু নেগেটিভ আয়ন ? প্রতিদিন নাকি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রের সংস্পর্শে এসে আমাদের দেহে বিপূল পরিমানে পজিটিভ আয়ন জমা হয়। এই পজিটিভ আয়নকে অকার্যকর করতে নেগেটিভ আয়ন প্রয়োজন। এই জিনিস নাকি সেই নেগেটিভ আয়ন তৈরী করতে পারে। এর ভিতরে কোন মেশিন ফিট করা নাই যে সে আমারে ক্রমাগত আয়ন তৈরী করে সাপ্লাই দিব ??? তারপর বলল, ইনফ্রারেড রে এর কথা। আমি নিশ্চিত তাদের মাঝে কেউ ইনয়্রারেড জিনিসটা যে কি তাই জানেনা। তারা বলল, আমরা শহরবাসী রা কম সুর্যের আলোর স্পর্শে আসি বলে আমরা সুর্যের ইনফ্রারেড রে পর্যাপ্ত পরিমানে পাইনা। তার অভাবে কিকি জানি রোগ হয় বলল। আমি জীবনেও এই ধরনের কিছু শুনিনাই। তাদের চমৎকারী বেল্ট নাকি ইনফ্রারেড রে বানাইতে পারে। যত্তসব গান্জাখোর !!! এরপর দেখালো ব্রেসলেটের রেডিয়েশন ধ্বংসকারী অলৌকিক ক্ষমতা। (আমি এখনেও শিওর ওরা রেডিয়েশন সম্পর্কে কিচ্ছু জানেনা।) একটা পরীক্ষার কথা কইলো যেটা নিয়া কয়দিন আগে ব্যপক লাফালাফি হইছিল। বিভিন্ন পত্রিকাতেও আইছিল। তারপর কয়দিন পর ব্যপার টা পুরা ফাওল তার সম্পর্কেও অনেক লেখালেখি হইসে। ওইযে একটা ডিমরে দুইটা মোবাইলের মাঝখানে বসায়া দুই মোবাইলে কল কানেকশন করে রাখা হইছিল প্রায় ৩৫ ঘন্টা। তাতে নাকি দুই মোবাইল থেকে নির্গত মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশনের কারণে ডিম টা পুরা খাওয়ার মত সিদ্ধ হয়ে গেছিল। (বাকোয়াজ) এই রেডিয়েশনের জন্য নাকি মানুষের মগজেরও ক্ষতি হয়। আমার মামত ভাই দিন রাতে প্রায় ১৬ ঘন্টাই ফোনে প্যাচাল পাড়ে, তাইলে ওর মগজের কি অবস্থা এখন :S তাদের এই ব্রেসলেট নাকি মোবাইলের এই ক্ষতিকর রেডিয়েশন এর কার্যক্ষমতা ধ্বংস করে। :O বুঝলাম নাহয় রেডিয়েশনে মাথার মগজে ক্ষতি হয়। কিন্তু ব্রেসলেট থাকে হাতে। ওই হাতে বসে বসে ওই জিনিস ক্যামনে মাথায় প্রবেশ করা রেডিয়োশনের মত ভয়ংকরের কার্যক্ষমতা ধ্বংস করে??? :O এগুলা রাশিয়ার মানুষ কিংবা যারা পারমানবিক কারখানায় কাজ করে তাদের জন্য সাপ্লাই করা উচিত। তারপর দেখাইল একটা চরম ব্যক্কলের মত লাইভ পরীক্ষা। এইটাতে ব্যপক মজা পাইছি। পরীক্ষার মুল বিষয় হল এই ব্রেষলেট মাত্র এক মিনিটে মানুষের শক্তি বৃদ্ধি করে। হাহ হাহ। দর্শকদের মাঝে থেকে একজনকে ডেকে নিয়ে তার শক্তি পরীক্ষা করা হল। দুই হাত পেছন দিকে নিয়ে শক্ত করে ধরে রাখতে বলা হল। তারপর পেছন থেকে তার হাতের উপর চাপ দেয়া হল। দর্শকটি পেছন দিকে হেলে পড়ে গেল। তারপর তাকে এক মিনিট ওই জাদুকরী ব্রেসলেট পরিয়ে রেখে আবার একই কায়দা করা হল। এবার লোকটি পড়লো না। আশ্চর্য ব্যাপার। না মোটেই আশ্চর্য না। প্রথম বার চাপ দেয়ার সময় হাতে ঠিক সোজাসুজি চাপ না দিয়ে পেছন দিকে কোনাকুনি চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। বলা যায় পেছনে টান দেয়া হয়েছিল। ফলে লোকটিকে পেছনে হেলে পড়তে হয়েছিল। পরেরবার চাপ দেয়ার সময় উপর থেকে হাতের উপর সরাসরি চাপ দেয়া হয়েছিল ফলে লোকটির ব্যলান্স রাখতে সমস্যা হয়নি। আপনারাও করে দেখতে পারেন। এই তো গেল ব্রেসলেটের জাদুকরী উপাখ্যান। তারপর আছে এটা দিয়ে ব্যবসা করার প্যাচাল। ডেসটিনি সম্পর্কে সবারই হয়তো কমবেশি ধারনা আছে। এখানেও তাই। তাই এটা দিয়ে ব্যবসা করা নিয়ে কিছু লিখলাম না। আর লিখতে ইচ্ছা করছেনা। এমনিতেই বিশাল হয়ে গেছে। বাঙালীদের বোকা বানানো মনে হয় খুব সহজ। নইলে ৫৮০০ টাকার এই জিনিষ মানুষ ধুমছে কিনছে কেন।
http://freesoften.blogspot.com http://en-topics.blogspot.com
2 comments:
আপনার বিশ্লেষণ ক্ষমতা অসাধারণ। সত্যি আমরা কতটাই না বোকা!!
aR
Bangla Hacks
ধন্যবাদ ভাই। সচেতনতা প্রয়োজন ব্যপক সচেতনতা।
Post a Comment